বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: গুরুতর অসুস্থ উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হককে ঢাকায় আনা হয়েছে।
আজ শনিবার (২১ আগস্ট) সকাল ১০টায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকায় আনা হয়েছে তাঁকে।
ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটে বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. নজরুল ইসলামের অধীনে তিনি চিকিৎসা নেবেন বলে জানা গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসান আজিজুল হককে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় গতকাল শুক্রবার (২০ আগস্ট) রাতে। আজ শনিবার সকাল পৌনে ১০টায় রাজশাহী মহানগরের আবাসিক এলাকা বিহাসে থাকা হাসান আজিজুল হকের বাড়ি ‘উজান’ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে রাজশাহী বিমানবন্দরে নেওয়া হয়। সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় নেওয়া হয়।
অধ্যাপক শাহ আজম শান্তনু জানান, সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান উল ইসলামের উপস্থিতিতে এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ছেলে ইমতিয়াজ হাসান বলেন, ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্স তার বাবার প্রধান সমস্যা। এছাড়া হার্টের সমস্যা আছে। পড়ে গিয়ে তিনি কোমরেও আঘাত পেয়েছিলেন। সঙ্গে আছে ডায়াবেটিস। এখন তাঁর শারীরিক অবস্থা খারাপ। বাসায় অন্তত সাতজন চিকিৎসক তাঁকে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন।
এর আগে ইমতিয়াজ হাসান ফেসবুকে লেখেন, আব্বাকে নিয়ে কখনো কিছু লেখা হয়ে ওঠে না। বাকি দুনিয়ার কাছে যে রূপেই পরিচিত হোন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমার জন্য নিরন্তর বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছেন আমার বাবা। মোটের ওপর গল্পকার হিসেবেই সবাই চেনেন হাসান আজিজুল হককে। ২০০৬-এ তার বহুপ্রার্থিত উপন্যাস ‘আগুনপাখি’ শেষ করে আত্মজীবনীতে হাত দিলেন। ধরে নিয়েছিলাম, আব্বার হাতে আর নতুন কোনো তাস নেই! কিন্তু আশি পেরনোর পরেও কলম থেকে নতুন নতুন কাজ বের করে আমায় অবাক করেছেন। লিখেছেন অনুবাদগ্রন্থ (আর্নেস্টহেমিংওয়েঃ কিলিমানজারোর বরফপুঞ্জ ও অন্যান্য গল্প), ভ্রমণবৃত্তান্ত (লন্ডনের ডায়েরি) আর কবিতার বই (সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে)। ‘বাপ, তোর সোনার কলম হোক’ -মায়ের দোয়া ফলেছে তাঁর জীবনে। মানুষের দোয়াও পেয়েছেন নিশ্চয়।
ইমতিয়াজ হাসান আরো লেখেন, মাঝে মাঝে সে প্রমাণ পাই যখন ভাড়া মেটানোর সময় বৃদ্ধ অটোচালক হঠাৎ তাঁর কুশল জানতে চেয়ে চমকে দেন অথবা শহরের রাস্তায় অচেনা কেউ এগিয়ে এসে তাঁর কথা জানতে চান। আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সবার মাঝে থেকেও আব্বা বড় একা, তাঁকে আরও একা করে দিয়েছে কভিড-১৯ অতিমারি। ছেলেবেলা থেকে দেখে এসেছি আব্বার ভাত-তরকারির সাথে সাথে মানুষের সঙ্গ-হাসি-গল্প-গান দরকার হয়। সঙ্গত কারণেই এ সময় সেটা পাচ্ছেন না। কভিডের মরণকামড় এড়িয়ে অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যা সামাল দেওয়া কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভুক্তভোগীরা জানেন। আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা, মনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু। আড়ালেও কি চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে? গত এক মাস ধরে তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওঁর পরিচর্যা করতে হয়। পরিবারের মানুষ আর গুটিকয়েক শুভানুধ্যায়ী ছাড়া আর কেউ সে কথা জানেন না। অনেকেই হয়তো মন চাইলেও তার খবর নিতে পারেননি বা যোগাযোগ করতে পারছেন না। সেজন্যই এটুকু লেখা। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাঁকে রাখবেন।
কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের বয়স এখন ৮২। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসর নিয়েছেন। এর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন শিক্ষকদের আবাসন এলাকা ‘বিহাস’- এ নিজের বাসায় থাকছেন।